মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা হুমকির মুখে, আশঙ্কা বৈষম্যের।

**মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা হুমকির মুখে, আশঙ্কা বৈষম্যের**  

✅মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে নতুন নীতিমালা তাদের আরও বৈষম্যের মুখে ফেলতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।  

মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা হুমকির মুখে, আশঙ্কা বৈষম্যের

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মালয়েশিয়া সরকার **এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড ফান্ড (ইপিএফ) বিদেশি কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে চায়, তবে তাদের অবদানের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ২ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।**  

✅**বিদেশি কর্মীদের প্রতি পদ্ধতিগত বৈষম্য?**  

মানবাধিকার সংগঠন **তেনাগানিতার নির্বাহী পরিচালক গ্লোরিন দাস** মন্তব্য করেছেন, এই সিদ্ধান্ত বিদেশি শ্রমিকদের আরও প্রান্তিক করে তুলবে, যদিও তারা মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  

তিনি বলেন, **"এই নীতি বৈষম্যের ব্যবধান আরও বাড়াবে। বিদেশি কর্মীরা এমনিতেই কম মজুরি, কঠিন কর্মপরিবেশ ও দুর্বল আইনি সুরক্ষার শিকার। অথচ পাম তেল, ইলেকট্রনিক্স ও নির্মাণ খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে তাদের অবদান অপরিসীম।"**  

দাস আরও বলেন, **"এই অবদান কমানোর ফলে বিদেশি শ্রমিকদের মূল্যবান কর্মী হিসেবে না দেখে শুধুমাত্র সস্তা শ্রমিক বা উৎপাদনের মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।"**  

✅**সামাজিক সুরক্ষার ন্যায্যতা কোথায়?**  

দাস মনে করেন, এই নতুন নীতির ফলে বিদেশি কর্মীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার একটি কাঠামো তৈরি হতে পারে, তবে তাদের যথাযথ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর অবদানের হার নির্ধারণ করা উচিত।  

তিনি বলেন, **"শ্রমিক প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন ও অভিবাসী অধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এমন নীতি তৈরি করা উচিত, যা শুধুমাত্র করপোরেট স্বার্থ নয়, বরং কর্মীদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করবে।"**  

✅**সরকারের পরিকল্পনা ও সমালোচনা**  

গত অক্টোবরে বাজেট উপস্থাপনের সময় **প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম** ঘোষণা করেছিলেন যে, সরকার পর্যায়ক্রমে **বিদেশি কর্মীদের জন্য ইপিএফ অবদান বাধ্যতামূলক করবে।**  

বর্তমানে, বিদেশি কর্মীরা ইচ্ছা করলে **৬০ বছরের কম বয়সীদের জন্য ১১% এবং তার বেশি বয়সীদের জন্য ৫.৫% হারে ইপিএফে অবদান রাখতে পারেন, যেখানে নিয়োগকর্তাদের অবদান মাত্র ৫ রিঙ্গিত।  

তবে, ৩ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার ইব্রাহিম জানিয়েছেন, **সরকার অভিবাসী কর্মীদের জন্য ইপিএফ অবদান হার ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে, যা মূলত প্রস্তাবিত ১২ শতাংশের তুলনায় অনেক কম।** তিনি আরও বলেন, **"এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন বাণিজ্য চেম্বারের মতামত নেওয়া হয়েছে।"**  

✅**শ্রমিকদের মতামত কি নেওয়া হয়েছে?**  

**পার্টি সোসিয়ালিস মালয়েশিয়া (পিএসএম)-এর কর্মী ব্যুরো প্রধান এম শিবরঞ্জানি** প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার কি ইপিএফ অবদানের বিষয়ে শ্রমিকদের মতামত নিয়েছে, নাকি শুধুমাত্র নিয়োগকর্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় রেখেছে?  

তিনি বলেন, **"২০১৩ সালে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের ফলে কোনো ব্যবসা বন্ধ হয়নি। একইভাবে, ইপিএফ অবদানের ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা হবে।"**  

এই বিতর্কের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা ও আর্থিক নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে বিদেশি কর্মীদের প্রতি বৈষম্য আরও গভীর হতে পারে।  


Next Post Previous Post