মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য বিবাহের নতুন নিয়ম! জেনে নিন বিস্তারিত!

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য বিবাহের নতুন নিয়ম! জেনে নিন বিস্তারিত

মালয়েশিয়ার বিবাহ প্রথা তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের মিশ্রণে সমৃদ্ধ। বিশেষ করে মালয় সমাজে, বিবাহ অনুষ্ঠানগুলি অত্যন্ত শৌখিন ও বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপিত হয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য বিবাহের নতুন নিয়ম! জেনে নিন বিস্তারিত!

✅মালয়েশিয়ার বিবাহের রীতিনীতি

আদাত মেরিসিক (Adat Merisik): 

এটি প্রাথমিক অনুসন্ধান পর্ব, যেখানে বরপক্ষ বধূর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বিবাহের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে।

আদাত বারতুনাং (Adat Bertunang): 

এটি বাগদান পর্ব, যেখানে উভয় পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাগদান সম্পন্ন করে এবং বিবাহের তারিখ নির্ধারণ করে।

বেরিনাই (Berinai): 

বিবাহের তিন দিন আগে হেনা বা মেহেদি অনুষ্ঠান হয়, যেখানে বর ও বধূর হাতে মেহেদি লাগানো হয়। এটি উর্বরতা ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। 

আকদ নিকাহ (Akad Nikah): 

মূল বিবাহ অনুষ্ঠান, যেখানে কনে ও বর ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

ওয়ালিমাতুল উরস (Walimatul Urus): 

বিবাহোত্তর ভোজ, যেখানে পরিবার, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আনন্দ উদযাপন করা হয়।

মালয়েশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিটধারী বিদেশি কর্মীদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ রয়েছে। বিশেষ করে, পিএলকেএস (PLKS) বা অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য স্থানীয় নাগরিকদের সাথে বিবাহে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া, ওয়ার্ক পারমিটের ধরন ও শর্তাবলী নির্ভর করে কর্মীর দক্ষতা, বেতন এবং কাজের প্রকৃতির উপর।

 ✅ওয়ার্ক পারমিটের ধরন

1. **কর্মসংস্থান পাস (Employment Pass):** 

উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবীদের জন্য, যাদের মাসিক বেতন কমপক্ষে RM10,000। এই পাসের মেয়াদ ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

2. **অস্থায়ী কর্মসংস্থান পাস (Temporary Employment Pass):

** নিম্ন দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের জন্য, বিশেষ করে উৎপাদন, নির্মাণ, কৃষি এবং পরিষেবা খাতে। এই পাসের মেয়াদ সাধারণত ২ বছর পর্যন্ত হয়।

3. **পেশাদার ভিজিট পাস (Professional Visit Pass):** 

স্বল্পমেয়াদী পেশাগত কার্যক্রমের জন্য, যেমন প্রশিক্ষণ বা বিশেষ প্রকল্পে অংশগ্রহণ। এটি সর্বোচ্চ ১২ মাসের জন্য প্রদান করা হয়।

⭕সাধারণ বিধিনিষেধ

- **চাকরি পরিবর্তন:** 

ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মালয়েশিয়ায় চাকরি পরিবর্তন করতে চাইলে নতুন নিয়োগকর্তার মাধ্যমে পুনরায় ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে।

**পারিবারিক আনয়ন:** 

কেবলমাত্র কর্মসংস্থান পাসধারীরা তাদের পরিবারকে মালয়েশিয়ায় আনতে পারেন। অস্থায়ী কর্মসংস্থান পাসধারীদের জন্য এই সুবিধা নেই।

**বেতন সীমা:** 

কর্মসংস্থান পাসের জন্য মাসিক বেতন কমপক্ষে RM10,000 হতে হবে, যা উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবীদের জন্য নির্ধারিত।

✅ওয়ার্ক পারমিটের শর্তাবলী ও বিধিনিষেধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পরিদর্শন করা পরামর্শ দেওয়া হয়। 

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের বিবাহের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট পূর্বশর্ত ও নিয়মাবলী রয়েছে। বিশেষ করে, পিএলকেএস (অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট) ধারী বিদেশি কর্মীদের জন্য স্থানীয় নাগরিকদের সাথে বিবাহে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক দাতুক রুসলিন জুসোহের মতে, এই আইন লঙ্ঘন করলে ওয়ার্ক পারমিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে এবং ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৬/৬৩ (অ্যাক্ট ১৫৫) অনুযায়ী দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। 

⭕বিবাহের পূর্বশর্ত:

বৈধ পাসপোর্ট: উভয় পক্ষের বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।

অবিবাহিত সনদ: 

উভয় পক্ষের অবিবাহিত সনদ প্রয়োজন, যা তাদের নিজ নিজ দেশের কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রদত্ত এবং মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা স্বীকৃত হতে হবে।

ধর্মীয় অনুমোদন: 

মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে, স্থানীয় ইসলামিক ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ (জাবাতান আগামা ইসলাম) থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

বিবাহ নিবন্ধন: 

বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর, এটি মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট (জাবাতান পেনদাফতারান নেগারা) এর মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।

⭕বিবাহের প্রক্রিয়া:

বিজ্ঞপ্তি প্রদান: 

বিবাহের ২১ দিন পূর্বে স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসে (জাবাতান পেনদাফতারান নেগারা) বিবাহের বিজ্ঞপ্তি জমা দিতে হবে।

স্বাক্ষীদের উপস্থিতি: 

বিবাহের সময় উভয় পক্ষের স্বাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে।

বিবাহের স্থান: 

বিবাহ স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিস বা অনুমোদিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন হতে পারে।

✅উপরোক্ত প্রক্রিয়া ও পূর্বশর্তগুলি পূরণ করে বাংলাদেশি নাগরিকরা মালয়েশিয়ায় বিবাহ করতে পারেন। তবে, বিবাহের পূর্বে মালয়েশিয়ার স্থানীয় আইন ও নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিস্তারিত তথ্যের জন্য মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পরিদর্শন করা পরামর্শ দেওয়া হয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের বিবাহের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পূর্বশর্ত রয়েছে, যা বিবাহের বৈধতা ও স্বীকৃতির জন্য পালন করা আবশ্যক। নিচে এই পূর্বশর্তগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:

১. বৈধ ভিসা ও পাসপোর্ট

বৈধ পাসপোর্ট: বাংলাদেশি নাগরিকদের বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে, যা মালয়েশিয়ায় অবস্থানের সময়সীমা পর্যন্ত বৈধ।

বৈধ ভিসা: ট্যুরিস্ট বা বিজনেস ভিসাধারীরা মালয়েশিয়ায় বিবাহ করতে পারেন। তবে, পিএলকেএস (অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট) ধারীদের জন্য স্থানীয় নাগরিকদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ। 

NTV BD MALAYSIA

✅২. অবিবাহিত সনদ ও অন্যান্য নথি

অবিবাহিত সনদ: বাংলাদেশ থেকে ইস্যুকৃত অবিবাহিত সনদ, যা প্রমাণ করে যে আপনি বর্তমানে অবিবাহিত।

জন্ম সনদ: আপনার জন্ম তারিখ ও স্থানের প্রমাণস্বরূপ জন্ম সনদ।

পূর্ববর্তী বিবাহবিচ্ছেদ বা মৃত্যু সনদ: যদি পূর্বে বিবাহিত হয়ে থাকেন, তবে বিবাহবিচ্ছেদ সনদ বা পূর্ববর্তী সঙ্গীর মৃত্যু সনদ প্রদান করতে হবে।

৩. স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন

ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন: মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় শরিয়া আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। অমুসলিমদের জন্য সিভিল রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে।

ইমিগ্রেশন বিভাগের অনুমোদন: বিদেশি নাগরিকদের বিবাহের জন্য মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি স্থানীয় নাগরিককে বিবাহ করতে চান।

৪. বিবাহের বয়সসীমা

বয়সসীমা: মালয়েশিয়ায় বিবাহের জন্য উভয় পক্ষের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে, শরিয়া আদালতের অনুমোদনে নিম্ন বয়সেও বিবাহ সম্ভব, তবে এটি বিরল এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য।

৫. বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া

নোটিশ প্রদান: বিবাহের পূর্বে স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসে নির্দিষ্ট সময়ের (সাধারণত ২১ দিন) জন্য বিবাহের নোটিশ প্রদান করতে হয়।

বিবাহ অনুষ্ঠান: নোটিশের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর, নির্ধারিত দিনে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হয়।

নিবন্ধন: বিবাহের পর, এটি স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধন করতে হয় এবং বিবাহ সনদ সংগ্রহ করতে হয়।


Next Post Previous Post