পৃথিবীতে উল্কাপিণ্ডের আগমন কিভাবে হয় ?রহস্য উদঘাটন।

পৃথিবীতে উল্কাপিণ্ডের আগমন কিভাবে হয় ?রহস্য উদঘাটন।

পৃথিবীতে-উল্কাপিণ্ডের-আগমন-কিভাবে-হয়-রহস্য-উদঘাটন

পৃথিবীতে উল্কাপিণ্ডের পতন বহুদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের বিষয়। সম্প্রতি, গবেষকরা এই রহস্য উন্মোচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, অধিকাংশ উল্কাপিণ্ড মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী গ্রহাণু বেল্ট থেকে এসেছে, যা সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণায়মান লক্ষাধিক পাথুরে মহাকাশ বস্তু দ্বারা গঠিত।

গ্রহাণু বেল্টের মানচিত্রায়ন: নতুন দিগন্ত

নাসা এবং এসইটিআই ইনস্টিটিউটের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা দীর্ঘ এক দশকের অনুসন্ধানের ফলাফল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা উল্কাপিণ্ডের পতনের পথ অনুসরণ করে তাদের উৎপত্তিস্থল শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। বিজ্ঞানী পিটার জেনিসকেন্স বলেন, “এটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা এক বিশাল রহস্যের সমাধানের মতো।”

বিশ্বজুড়ে উল্কাপিণ্ড পর্যবেক্ষণ

গবেষণাটি আরও নির্ভুল করতে, ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাদায় ‘অল স্কাই’ ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী এবং সাধারণ পর্যবেক্ষকরা এই প্রকল্পে যুক্ত হন, যা ‘গ্লোবাল ফায়ারবল অবজারভেটরি’ নামে পরিচিত। গবেষকরা ১৭টি উল্কাপাতের ঘটনা ট্র্যাক করে এবং ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা ও ডোরবেল ক্যামেরার সাহায্যে আরও তথ্য সংগ্রহ করেন।

উল্কাপিণ্ডের উৎপত্তিস্থল ও তাদের বৈশিষ্ট্য

এ পর্যন্ত ৭৫টি উল্কাপিণ্ডের উৎস শনাক্ত করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই গ্রহাণু বেল্টের অংশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই শিলাগুলো একসময়ের বৃহৎ গ্রহাণুর টুকরো, যা অতীতে সংঘর্ষের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এই গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘এইচ কনড্রাইটস’ নামক লোহাযুক্ত উল্কাপিণ্ডের একটি দল, যা করোনিস গ্রহাণু পরিবার থেকে এসেছে।

এইচ কনড্রাইটস:

- করোনিস, কারিন ও করোনিস ২-৩ গ্রহাণু গুচ্ছের সঙ্গে সম্পর্কিত।

- আরেকটি দল নিলি পরিবার থেকে এসেছে।

এল ও এলএল কনড্রাইটস:

- প্রধানত অভ্যন্তরীণ গ্রহাণু বেল্ট থেকে আসে।

- ফ্লোরা ও হার্থা পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত।

- প্রায় ৪.৬৮ বিলিয়ন বছর আগে বিশাল সংঘর্ষের কারণে অনেক এল কনড্রাইট পৃথিবীতে এসেছে।

পৃথিবীর সুরক্ষায় গবেষণার গুরুত্ব

এই গবেষণা শুধু উল্কাপিণ্ডের উৎপত্তি সম্পর্কে নয়, বরং ভবিষ্যতে পৃথিবীকে গ্রহাণুর আঘাত থেকে রক্ষা করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কোনও গ্রহাণু যদি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তবে গবেষকরা তার কক্ষপথ বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারবেন এটি কোথা থেকে এসেছে, কী দিয়ে তৈরি এবং কীভাবে পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।বিজ্ঞানী পিটার জেনিসকেন্স বলেন, “আমরা কেবল শুরু করছি, মনে হচ্ছে যেনো এক নতুন বিশ্বের প্রথম রূপরেখা আঁকতে চলেছি।”এই গবেষণার মাধ্যমে মহাকাশের রহস্য উন্মোচনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল মানবসভ্যতা।


**আপনি কি মহাকাশ গবেষণা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী? আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন এবং মহাকাশ সংক্রান্ত সর্বশেষ আপডেট পেতে আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন!**

Next Post Previous Post